![ডোনাল্ড লু'র সঙ্গে বাংলাদেশের দুই মন্ত্রীর বৈঠকে কী আলোচনা হলো? - BBC News বাংলা (1) ডোনাল্ড লু'র সঙ্গে বাংলাদেশের দুই মন্ত্রীর বৈঠকে কী আলোচনা হলো? - BBC News বাংলা (1)](https://i0.wp.com/ichef.bbci.co.uk/ace/ws/640/cpsprodpb/3812/live/6ef73c70-12b2-11ef-9ff1-31672546ac9e.jpg)
ছবির উৎস, US EMBASSY, DHAKA
দুই দিনের সফরের শেষদিনে বাংলাদেশের দুইমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু।
বুধবার সকালে সচিবালয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক করেন মি. লু। এরপর বিকেলে তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেখা করতে যান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে।
বাংলাদেশের গত সাতই জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে মানবাধিকার ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনসহ বিভিন্ন বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের মতপার্থক্য দেখা দিয়েছিল।
অবাধ, নিরপেক্ষ ও নির্বিঘ্ন নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতিতে কড়াকড়ি আরোপের ঘোষণাও দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।
ফলে নির্বাচনের পাঁচ মাসের মাথায় ডোলান্ড লু'র এবারের সফরে সম্পর্ক উন্নয়নের ইঙ্গিত বলেই মনে করছেন অনেকে।
মি. লু'র বক্তব্যেও সেটির আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
“বাংলাদেশ সফরে এসে গত দু'দিনে আমি দুই দেশের জনগণের মধ্যে পুনরায় আস্থা স্থাপনের চেষ্টা করছি," পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে বুধবার বিকেলে সাংবাদিকদের বলেন মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু।
“আমরা জানি, গত বছর বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের অনেক টেনশন ছিল। আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন (বাংলাদেশে) অনুষ্ঠানে যথেষ্ট চেষ্টা করেছিলাম।”
“এতে কিছু টেনশন তৈরি হয়েছিল। আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে এমন ঘটনা ঘটা স্বাভাবিক।"
“আমরা সামনে তাকাতে চাই, পেছনে নয়। আমরা সম্পর্ক উন্নয়নের উপায় খুঁজে বের করতে চাই,” সাংবাদিকদের বলেন মি. লু।
বৈঠকে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি, র্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞা, শ্রম আইন সংশোধন এবং জলবায়ু পরিবর্তনসহ দ্বিপাক্ষীক সম্পর্কের আরও বেশকিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন মি. লু।
“আমাদের সম্পর্কের পথে অনেকগুলো কঠিন বিষয় রয়েছে, র্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞা, মানবাধিকার, শ্রম অধিকার ও ব্যবসার পরিবেশের উন্নয়ন।”
“কিন্তু কঠিন বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করার জন্য ইতিবাচক সহযোগিতার ওপর ভর করে এগিয়ে যেতে চাই,” সাংবাদিকদের বলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু।
তবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ জানিয়েছেন যে, মি. লু’র সঙ্গে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে তার কোনো আলোচনা হয়নি।
“আমার সঙ্গে এটা নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি। পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে হয়তো আলোচনা হয়ে থাকতে পারে,” বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
প্রসঙ্গতঃ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বৈঠকের আগে মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সাথে বৈঠক হয় ডোনাল্ড লু'র।
ডোনাল্ড লু-র সফর নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে এত কথাবার্তা কেন?
হোটেল-রেস্তোরাঁয় পুলিশের ‘বিশেষ ডিসকাউন্ট অফার’ পাওয়ার বিষয়ে যা জানা যাচ্ছে
চারশো দূরস্থান, বিজেপির হাত থেকে গরিষ্ঠতাও কি ক্রমশ ফসকে যাচ্ছে?
![ডোনাল্ড লু'র সঙ্গে বাংলাদেশের দুই মন্ত্রীর বৈঠকে কী আলোচনা হলো? - BBC News বাংলা (2) ডোনাল্ড লু'র সঙ্গে বাংলাদেশের দুই মন্ত্রীর বৈঠকে কী আলোচনা হলো? - BBC News বাংলা (2)](https://i0.wp.com/ichef.bbci.co.uk/ace/ws/640/cpsprodpb/53c0/live/b677adf0-12b2-11ef-9ff1-31672546ac9e.jpg)
ছবির উৎস, US EMBASSY, DHAKA
মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কথা না হলেও বৈঠকে র্যাবের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
“তবে র্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার বিষয়টি যে দু’দেশের সম্পর্কের উপরে প্রভাব ফেলেছে, সেটা আমরা বলেছি,” ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেন মি. মাহমুদ।
দু’দেশের সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে মার্কিন সরকার বাংলাদেশকে জিএসপি সুবিধা ফিরিয়ে দিতে চায় বলেও জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
“এই সুবিধা ফিরে পেতে হলে শ্রম আইনে কিছু সংশোধন করতে হবে বলে তারা জানিয়েছে। সেটা নিয়ে আমরা ইতোমধ্যেই কাজ করছি বলে তাদের জানিয়েছি,” সাংবাদিকদের বলেন মি. মাহমুদ।
রানা প্লাজা দুর্ঘনার পর বাংলাদেশ থেকে জিএসপি সুবিধা তুলে নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। কবে নাগাদ সেই সুবিধা আবার ফিরে আসতে পেতে পারে, সে ব্যাপারে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা হয়নি বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
“তারা এতদিন এটি বন্ধ রেখেছিল, এখন পুনরায় চালু করতে চায়। চালু হলেই বাংলাদেশ জিএসপি সুবিধা পাবে,” সাংবাদিকদের বলেন মি. মাহমুদ।
![ডোনাল্ড লু'র সঙ্গে বাংলাদেশের দুই মন্ত্রীর বৈঠকে কী আলোচনা হলো? - BBC News বাংলা (3) ডোনাল্ড লু'র সঙ্গে বাংলাদেশের দুই মন্ত্রীর বৈঠকে কী আলোচনা হলো? - BBC News বাংলা (3)](https://i0.wp.com/ichef.bbci.co.uk/ace/ws/640/cpsprodpb/25d1/live/f8183770-12b2-11ef-9ff1-31672546ac9e.jpg)
ছবির উৎস, US EMBASSY, DHAKA
‘অতীত নিয়ে কথা হয়নি’
মি. লু’র সঙ্গে বৈঠকে অতীত নিয়ে কোনও কথা হয়নি বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
“আমরা দু’জনই বলেছি যে, অতীতে কী ঘটেছে, সেটা নিয়ে আলোচনা করতে চায় না,” ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেন মি. মাহমুদ।
তিনি আরও বলেন, “আলোচনা ও পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে দু’দেশের মধ্যকার সম্পর্ককে আরও কীভাবে এগিয়ে নেওয়া যায়, সে বিষয়েই আলোচনা হয়েছে।”
এক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা এবং আয়কর আদায়ের ব্যবস্থা আধুনিকায়নে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ সরকারকে সাহায্য করতে চায় বলেও জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
এছাড়া আনুষ্ঠানিকভাবে মধ্যম আয়ের কাতারে যাওয়ার পরও বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেন বাংলাদেশকে দেওয়া সুযোগ এবং সহযোগিতা অব্যাহত রাখে, সে বিষয়ে ডোনাল্ড লুকে অনুরোধ জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
এদিকে, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি গড়ে তোলা, কর্মশক্তি বৃদ্ধি, নিরাপত্তা সহযোগিতার উন্নতি এবং জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পাশে থাকার অঙ্গীকারকে পুনর্ব্যক্ত করেছে বলে এক ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছে ঢাকার মার্কিন দূতাবাস।
একইসঙ্গে, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার মূল্যবোধকে শক্তিশালী করার বিষয়েও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ চালিয়ে যাবে বলেও জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, দুই দিনের সফরে মঙ্গলবার ঢাকায় আসেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু।
![ডোনাল্ড লু'র সঙ্গে বাংলাদেশের দুই মন্ত্রীর বৈঠকে কী আলোচনা হলো? - BBC News বাংলা (4) ডোনাল্ড লু'র সঙ্গে বাংলাদেশের দুই মন্ত্রীর বৈঠকে কী আলোচনা হলো? - BBC News বাংলা (4)](https://i0.wp.com/ichef.bbci.co.uk/ace/ws/640/cpsprodpb/4ed9/live/f6aed8e0-12b1-11ef-bee9-6125e244a4cd.jpg)
ছবির উৎস, US EMBASSY, DHAKA
'ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা'
পরারাষ্ট্রমন্ত্রীর মতো পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রীও জানিয়েছেন যে মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু’র সঙ্গে অতীত নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি।
“আমরা ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলেছি, অতীতের কোনও বিষয় নিয়ে কথা হয় নাই,” বৈঠক শেষে দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী।
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশ এবং আমেরিকার মধ্যে যে সম্পর্ক আছে, সেটাকে কীভাবে আরও এগিয়ে নিতে পারি, সেবিষয়ে আলোচনা হয়েছে।”
“সেখানে স্বাভাবিকভাবেই যে বিষয়গুলোতে আমাদের অবস্থান অভিন্ন, যেমন: জলবায়ু পরিবর্তন এবং এর অভিঘাত মোকাবেলায় বাংলাদেশ এবং আমেরিকা আরও কীভাবে কাজ করতে পারে, সেটা বিয়ে আলাপ করেছি।"
"জলবায়ু অর্থায়নের বিষয়ে বিশ্বব্যাংক, এডিবি আগামী দিনে কীভাবে অর্থায়ন করবে, সে বিষয়েও আমরা আলোচনা করেছি," সাংবাদিকদের বলেন মি. চৌধুরী।
পরিবেশমন্ত্রী বলেন, এসব বিষয় নিয়ে ভবিষ্যতে আবার বসবেন। তখন সবকিছু সুনির্দিষ্ট হবে। কোন কোন খাতে সহযোগিতা হবে, তা নির্ধারণ করা হবে।
ডোনাল্ড লু জোর দিয়েছেন, ভবিষ্যতে পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে যা-ই বিনিয়োগ হোক, তা যেন প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছে।
বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রাধিকার একই জায়গায়। সেটি হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন। এ বিষয়ে কীভাবে কাজ করা হবে, কৌশল কী হবে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
এদিকে, পরিবেশমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর চমৎকার আলোচনা হয়েছে বলে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের জানান মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু।